বন কর্মকর্তারাই কাটছেন বনের গাছ!

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলের ভাটেরখীল এলাকায় প্রায় ৫ একর বনভূমির এক হাজারের বেশি গেওয়া গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য এ গাছগুলো কয়েক বছর আগে লাগিয়েছিল উপকূলীয় বন বিভাগ।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বনের জায়গায় মাছের ঘের করতে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনে লাগানো গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার পর প্রভাবশালীরা তা দখলে নেবে। এর আগে ওই এলাকায় একই কায়দায় কয়েক একর বনভূমি দখল করে প্রভাবশালীরা। তবে সীতাকুণ্ড রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেনের দাবি, নতুন গাছ লাগাতে ওই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। ওই এলাকায় মাছের ঘেরের জন্য দখল করা জায়গা ছেড়ে দিতে এরই মধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ভাটেরখীল সাগর উপকূলে গিয়ে কথা হয় বন কর্মচারী (বিএন) আবুল হোসেন আজাদের সঙ্গে। এ সময় তিনি নতুন রোপণ করা গাছের চারা পাহারা দিচ্ছিলেন। তার কয়েকশ গজ দক্ষিণে উপকূলের সবুজ বনায়নের গাছ কাটছে কয়েক যুবক। একই সময় ওই জায়গার উত্তরে দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে গাছ কেটে মাছের ঘের করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, ছাবের আহমদ ও আলতাফ উদ্দিন বলেন, উপকূলের সবুজ বেষ্টনীর জায়গাগুলো তাদের পূর্ব পুরুষদের। আরএস খতিয়ানে তাদের রেকর্ড আছে। ৮০ ও ৯০ দশকে বন বিভাগ এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগায়। যেসব জায়গা খালি ছিল, সেখানে কৃষিকাজ করতেন তারা। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলের মানুষকে রক্ষা করতে বন বিভাগ বনায়ন করে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনের গাছ কেটে ওই জায়গাগুলোতে মাছের ঘের করছে। অনেকে সংরক্ষিত উপকূলীয় বনের জায়গা থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে বন কর্মচারী আবুল হোসেন আজাদ বলেন, কারা গাছ কাটছে ও মাছের ঘের নির্মাণ করছে, তা তিনি জানেন না। কর্মকর্তারা তাকে বিষয়টি জানাননি। ওইসব বিষয় রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তারা দেখাশোনা করেন। দেখলেও তা বলার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। নতুনভাবে রোপণ করা গাছের চারা গরু-ছাগল থেকে রক্ষার জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান।

গত কয়েক দিন ধরে সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় বন বিভাগের লাগানো প্রায় ৫ একর জায়গায় এক হাজারের বেশি ছোট বড় গেওয়া গাছ কেটে ফেলা হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই গাছ কাটা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

গাছ কাটার দায়িত্বে থাকা আবুল কাশেম বলেন, তিনি ৩০ হাজার টাকায় গাছগুলো কাটছেন। এক হাজারের বেশি ছোট-বড় গাছ কাটা হলেও আরও এক হাজারের বেশি গাছ কাটা বাকি রয়েছে। সীতাকুণ্ড ভাটেরখীল ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাকে গাছগুলো কাটতে বলেছেন বলে জানান তিনি।

উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড রেঞ্জের রেঞ্জার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, নতুন গাছ লাগানোর জন্য গেওয়া গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। ওখানে মাউন্ড নামে নতুন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। উপকূলে যদি গেওয়া গাছগুলো ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে তাহলে বন বিভাগ কেন এ গাছগুলো লাগিয়েছিল- এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তবে সহকারী রেঞ্জার খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। এত বড় গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। এটি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

সীতাকুণ্ড ভাটেরখীল ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সূত্র: সমকাল